পরিবার হচ্ছে একটি শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। বর্ণমালা থেকে শুরু করে ভাষা, আদব, কায়দা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ প্রতিটা শিশু প্রথম নিজের বাসা থেকেই শেখে। আর, বাচ্চারা যদি বাসা থেকে শেখাটা শুরু করতে পারে, তবে বিদ্যালয়ে শেখাটা তার জন্য আরো সহজ হবে। মূলত ৩-৬ বছর বয়স থেকেই একটি বাচ্চার পড়ালেখা শেখা শুরু হয়। 

আজকে শেখাব  আপনার বাচ্চাকে ঘরেই ইংরেজি শেখানোর কৌশল। যেহেতু ইংরেজি একটি বিদেশী ভাষা, সেজন্য বাচ্চাদের এটা শেখাতে বেগ পেতে হয়। অনেক মা বাবা ভাবেন ,আমি নিজেই তো  ভালো ইংরেজি পারি না, বাচ্চাকে কি্ভাবে শেখাব? আবার অনেকে ইংরেজি ভালো পারেন, কিন্তু বুঝতে পারেন না যে শেখানর প্রক্রিয়া কিভাবে শুরু করবেন।

চিন্তা করবেন না নিচের পদ্ধতি অনুসারে খুব সহজেই আপনার ছোট বাচ্চাকে আজই  ইংরেজি শেখানো শুরু করতে পারেন-

১. আনন্দের সাথে শুরু করুন এবং  ধৈর্য রাখুন

আপনার ইংরেজি যদি খুব ভালো না ও হয়, তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। কিভাবে করবেন, পারবেন নাকি? এসব চিন্তা বাদ দিয়ে, প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে আনন্দ ও ধৈর্যের সাথে শুরু করতে হবে।  শেখানোর জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আপনার আগ্রহ ও ইচ্ছা । বাচ্চাকে প্রচুর উৎসাহ দিন এবং প্রশংসা করুন। বাচ্চা যদি শিখতে দেরী করে তবে দুশ্চিন্তা করবেন না। প্রথমে তাদের কিছু সময় লাগবে, কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর তারা ঠিকই তা আয়ত্ত করে নিবে। এজন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

 

২.একটা রুটিন তৈরি করুন

প্রথমেই একটা রুটিন তৈরি করে ফেলুন। রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় সন্তানকে ইংরেজি শেখান। তবে অনেক লম্বা সময় ধরে পড়াবেন না। ১৫ মিনিটের ছোট ছোট সেশন হলে সবচেয়ে ভালো। এরপর শিশুর আগ্রহ ও বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ানর সময়টি বাড়াবেন। প্রতিদিন ঐ  নির্দিষ্ট সময় সন্তানকে পড়াতে বসান। তাহলে সন্তান প্রতিদিন ঐ সময়টাতে পড়তে বসার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকবে। আর, যে শব্দগুলো শেখাবেন সেগুলো বার বার তার সামনে বলবেন। কারণ বাচ্চারা যা অনেক বার শুনে তা দ্রুত বলতে শেখে।

৩. প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসরণ করুন

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসরণ করুন। নিজে নিজে একটা সিলেবাস তৈরি করতে পারেন। এছাড়া, বাচ্চার পছন্দ ও আগ্রহ অনুসারে টপিক পছন্দ করতে পারেন। নিচে কিছু টপিক দেওয়া হল। আপনি এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন-

১. Numbers (1-10,10-20, 30-100),

2. Colors,

৩. Body parts,

৪. Flowers and Fruits

৫. Animals

৬. Vegetables

  বিভিন্ন ইংরেজি ছড়ার  একটি সিলেবাস তৈরি করতে পারেন।ইংরেজি ছড়ার প্রচুর বই কিনতে পাওয়া যায়। অথবা কোন ছবি ওয়ালা বই দেখে পশু,পাখি, ফল ইত্যাদির ইংলিশ নাম শেখাতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন নির্দিষ্ট  রুটিন ও কাজের সিলেবাস অনুসরণ করলে, বাচ্চারা ভয় কম পায় এবং দ্রুত শিখে।

৪. ইংলিশ পড়ার একটি নির্দিষ্ট জায়গা তৈরি করুন

linkheed_62784d3fca6db62b1b2745014a6a870b.jpg

পড়ার জায়গাটি সুন্দর ভাবে সাজান

যদি আপনার বাসায় পর্যাপ্ত জায়গা থাকে, তবে বাচ্চার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা সুন্দর করে সাজাতে পারেন। যেখানে, বাচ্চার ইংরেজি বই, ইংরেজি শব্দের খেলনা,  ছবি , রং , পেন্সিল ইত্যাদি সাজিয়ে রাখুন। কারণ প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট জায়গায় পড়তে বসালে বাচ্চারা দ্রুত পড়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে পারে। আপনার জন্য ও কাজটা সহজ হবে।

৫. প্রতিদিনের ব্যবহৃত শব্দ গুলোর ইংরেজি শেখান

প্রতিদিনের ব্যাবহারের শব্দগুলোর বা আমাদের আশে পাশের ব্যবহারের জিনিস গুলোর ইংরেজি অর্থগুলো নিজে শিখুন এবং অল্প অল্প করে বাচ্চাকে শেখান। এই পদ্ধতিতে বাচ্চারা দ্রুত শিখে। কারণ যেটা শিখবে সেটা ব্যবহার করতে পারলে বাচ্চারা তা দ্রুত মনে রাখতে পারবে। যেমন –

        -কাপড় পড়ার সময় কাপড়ের রঙ, নাম ইত্যাদি উল্লেখ করুন। ছোট ছোট ইংরেজি বাক্যও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-

Where is your blue t-shirt? – তোমার নীল টি-শার্ট কোথায়?

Put on your green shoes- তোমার সবুজ জুতাগুলো পড়।

Red dress, black pant, white jacket এরকম শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে রঙ এবং পোশাকের ইংরেজি নাম গুলো বাচ্চারা শিখে ফেলবে। আর এজন্য আপনাকে আলাদা সময় বের করার প্রয়োজন নেই। বাচ্চাকে রেডি করাতে করাতেই অনেক কিছু শিখিয়ে ফেলতে পারবেন।

   – খেলনা গোছাতে গোছাতে খেলনার ইংরেজি শব্দ গুলো শেখান। বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিন। এবং এগুলোর ইংরেজি নাম শিখিয়ে দিন।খুব দামি খেলনার প্রয়োজন নেই। এখন কিন্তু বিভিন্ন প্রাণী, গাড়ি,ফলের কম দামি খেলনার সেট পাওয়া যায়। খেলতে খেলতে বা রুম পরিষ্কার করতে করতে এগুলোর ইংরেজি নাম শিখিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন-

Where is your yellow car?- তোমার হলুদ গাড়িটি কোথায়?

Put your tiger doll on the bed.- তোমার খেলনা বাঘটি বিছানায় রাখ।

   – খাওয়ার সময় বা রান্না করার সময় এবং দোকানে কেনা কাটার সময় খাবারের ইংরেজি নাম গুলো  কিন্তু সহজেই শিখিয়ে ফেলতে পারেন।

এই পদ্ধতিতে বাচ্চারা খুব দ্রুত শিখে। তবে একসাথে খুব বেশি শেখাবেন  না। যে শব্দ গুলো শেখাবেন সেগুলো বার বার বাচ্চার সামনে বলুন ।

 

৬। গল্প পড়ে শোনান:

এখন ছবি ওয়ালা অনেক গল্পের বই কিনতে পাওয়া যায়। বাচ্চারা এসকল গল্প পছন্দ করে। ঘুমের সময় শুয়ে শুয়ে তাদের গল্প পড়ে শোনান। গল্পের মধ্যে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন জিনিসের ইংরেজি অর্থ গুলো ধীরে ধীরে শিখিয়ে ফেলুন।

৭। ছড়া ও গানের মাধ্যমে:

বিভিন্ন ইংরেজি ছড়া গুলো শেখান। সেগুলো সুর করে গানের মত করেও শেখাতে পারেন। ঘরেই যদি ছড়া শিখে এর অর্থ গুলো বুঝে ফেলে তবে স্কুলে এগুলো আয়ত্ত করতে বাচ্চাদের জন্য সহজ হবে। এখন প্রচুর ছবি ওয়ালা ছড়ার বই পাওয়া যায়। দু তিনটি কিনে ফেলুন।

৮। Grammar  structure শেখান:

ছোট বাচ্চাদের গ্রামার শেখান কঠিন। তবে,তাদের কে বিভিন্ন কথা বলার সময় কিছু কিছু Grammatical  Structure  শেখান। যেমন, বাসার কোন নিয়ম – কানুন শেখানর সময় must/ mustn’t ব্যবহার করুন।

এছাড়া, পড়াতে বসানর সময় নিয়মিত কিছু বাক্য বলুন। যেমন, ‘It’s English time.’

‘ Let’s sit down’,

‘Which poem shall we start with today?’

বাচ্চারা এধরনের সহজ বাক্য গুলো শুনে শুনে সহজেই আয়ত্ত করতে পারে। এজন্য এই বাক্যগুলো বার বার বলুন।

এছাড়া কিছু কিছু Phrase বাচ্চারা খুব সহজেই আয়ত্ত করে ফেলতে পারে। যেমন-

Please.

Thank you.

Can I have a glass of water?

Where is your new book?

What color is it?

I like motorcycle!

I do not like noises.

আপনার বাচ্চার বয়স এবং পছন্দ অনুযায়ী পড়ানর কৌশলে  পরিবর্তন আনতে পারেন।নিজের ইংরেজি ভালো না হলে চিন্তা করবেন না,বাচ্চাদের বই দেখে নিজে শিখে একটু অনুশীলন করে নিন।  আর অবশ্যই যে কোন শব্দের বাংলাটা প্রথমে শেখাবেন। এভাবে, নির্দিষ্ট সিলেবাস এবং রুটিন করে অন্যান্য বিষয় ও শিখাতে পারেন।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন , কিছু বাচ্চা দ্রুত শিখে আবার কিছু বাচ্চা ধীরে শিখে। এজন্য ধৈর্য রাখুন। সবচেয়ে প্রয়োজনীয়  বিষয় হচ্ছে সে এবং আপনি উভয়েই যেন পড়ানর এই সময়টাকে উপভোগ করতে পারেন। যেগুলো পারবে সেগুলো নিয়ে তাকে উৎসাহ দিন । না পারলে বকা দিবেন না। যতক্ষণ তার ধৈর্য থাকে ততক্ষণ শেখান। কারণ পড়া সম্পর্কে একবার বিরক্তি  এসে পরলে তখন কিন্তু শেখান অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সারাদিন যত ব্যস্ততাই থাকুক একটু সময় বের করুন। বাচ্চার সাথে এ সময়টা উপভোগ করুন। এতে বাচ্চার সাথে সময় ও কাটান হবে আবার, বাচ্চাকে শেখানও হবে।

তো আজ থেকেই শুরু হয়ে যাক আপনার আর ছোট বাবুর বাসায় ইংরেজি শিক্ষা কোর্স!!