হিট স্ট্রোক হলে কী করবেন

0
11KB

গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে খেতে পারেন ডাব। মডেল: বেনজির। ছবি: অধুনা

গরমের উৎপাতে দিশেহারা অবস্থা। নানা রকম অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। তবে কয়েক দিনে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে বড়-ছোট নানা বয়সের মানুষ।

হিট স্ট্রোক কী?
গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিট স্ট্রোক। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে।
স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।

হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়?
প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—
* শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
* যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।
* শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
* কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী?
তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এর লক্ষণ গুলো হলো—
* শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রিº ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।
* ঘাম বন্ধ হয়ে যায়।
* ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।
* নিশ্বাস দ্রুত হয়।
* নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
* রক্তচাপ কমে যায়।
* খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
* রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় কী?
গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো—
* হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো।
* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।
* বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।
* বাইরে যাঁরা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।
* প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।
* তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।
* রোদের মধ্যে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতেই হয়, তবে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে ও প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।

আক্রান্ত হলে কী করণীয়?
প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো—
* দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। যদি সম্ভব হয়, ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন।
* ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।
* প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না।

কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তবে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যাঁরা থাকবেন তাঁদের করণীয় হলো—
* রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান।
* তাঁর কাপড় খুলে দিন।
* শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।
* সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন।
* রোগীর জ্ঞান থাকলে তাঁকে খাবার স্যালাইন দিন।
* দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
* সব সময় খেয়াল রাখবেন হিট স্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে।
হিট স্ট্রোকে জীবন বিপদাপন্ন হতে পারে। তাই এই গরমে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে এর থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

ডিন, মেডিসিন অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Suche
Kategorien
Mehr lesen
Andere
Unveiling the Best Outdoor LED Floodlights: Your Ultimate Guide to Glaring Comparisons!
Unveiling the Best Outdoor LED Floodlights: Your Ultimate Guide to Glaring Comparisons!...
Von Nolan Pigue 2025-03-07 18:32:03 0 1KB
Andere
What is a 613 Wig? Understanding Its Color and Style Significance
When exploring the world of wigs, you may have come across the term 613 wig. But what exactly...
Von Joseph Caruso 2025-02-07 20:17:42 0 2KB
Andere
為什麼越來越多人選擇加熱菸IQOS?
隨著人們對健康生活方式的追求不斷加深,IQOS電子煙憑藉其先進的加熱技術、人性化的設計以及完善的售後服務,加熱菸正在改變許多人的生活習慣。 一、健康與享受的新平衡...
Von Qkpcm Jwnpfkacm 2025-04-16 09:01:12 0 1KB
Andere
Navigating Georgia’s Personal Injury Laws: What Every Accident Victim Should Know
When accidents happen, they can leave more than just physical and emotional scars—they...
Von Dpe Legal 2024-12-27 13:21:30 0 2KB
Andere
自然搜索排名如何提升网站流量的五个关键因素 自然搜索排名如何提升网站流量的五个关键因素
...
Von Daniel Jones 2025-01-07 17:52:39 0 2KB
Linkheed https://linkheed.com